
স্টাফ রিপোর্টারঃ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের প্রতিটি স্কুলে দুটি করে স্কাউট দল গঠন করে সকল শিক্ষার্থীদের স্কাউটিং শিক্ষা দেয়া হবে। কারন আজকের শিশুরাই আগামীতে দেশের কর্নধার হবে। তাই স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে একজন সৎ, দক্ষ, যোগ্য ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মৌচাক, গাজীপুরে অনুষ্ঠিত হয় জাম্বুরী সমাপনী অনুষ্ঠান। বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু এরিনায় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান জামুরী চীফ ড. মো. মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ স্কাউটস সভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ। এসময় প্রধানমন্ত্রীকে জাম্বুরীর স্কার্ফ ও ব্যাজ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের পর স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার ও জাম্বুরী চীফ ড. মো. মোজাম্মেল হক খান। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আজ থেকে ০৮ বছর আগে ২০১৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এপিআর কনফারেন্সে এই জাম্বুরীর বীজ বপন হয়। আজকে তা পূর্ণতা পেয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে উঠবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বর্ণিল এ জাদুরীতে ১১০০০ জন স্কাউট ও ফাউটারের পাশাপাশি জাম্বুরী মাঠে ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, স্কাউট চায়না (তাইওয়ান), থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, ইউএসএ, জার্মানী, কানাডা, বিশ্ব স্কাউট সংস্থা ও এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনের শতাধিক প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করে। জাম্বুরীকে স্মরণীয় রাখার জন্য বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ করে।
প্রধানমন্ত্রী সমাপনী অনুষ্ঠানে স্মারক ডাক টিকেট অবমুক্ত করেন এবং বাংলাদেশ স্কাউটসের ১২ জন শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ডীর মাঝে অ্যাওয়ার্ড বিতরণ শেষে জাম্বুরী পতাকা হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ফাউটরা এই ক্যাম্পে নতুন জ্ঞান প্রযুক্তির সাথে পরিচিত দেশী-বিদেশী সকলের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করেছে।
একই সাথে তাঁবুবানের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তারা সক্ষম হবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ রূপান্তরে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে, বিশ্বস্কাউট জাম্বুরী একদিন এদেশেই অনুষ্ঠিত হবে। গাছের ছায়া ঘেরা এমন সুন্দর পরিবেশ সবাইকে মুদ্ধ করেছে। ভবিষ্যতে এই পরিবেশ ধরে রাখতে হবে গাছ কেটে পরিবেশের ক্ষতি সরা যাবে না।
অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে স্কাউট সদস্যরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।
স্কাউটিংয়ের মূল লক্ষ্য হলো একজন শিশু, কিশোর ও যুবদের শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশ সাধন করা। এসবের মাধ্যমে একজন স্কাউট নিজেকে তৈরি করে মেধা ও শ্রম দিয়ে স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একজন সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে।
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশসমূহের অংশগ্রহণে প্রতি চার বছর অন্তর এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল জাম্বুরী অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ ডিসেম্বর ১৯৭৩ থেকে ০৪ জানুয়ারি ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ফিলিপাইনে সর্বপ্রথম এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল স্কাউট জাম্বুরী অনুষ্ঠিত হয়।এর ধারাবাহিকতায় ৩২তম এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল জাম্বুরী বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একই সাথে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় জাম্বুরী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৫ সনে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত ২৫তম এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল স্কাউট কনফারেন্সে বাংলাদেশ এই জাম্বুরী আয়োজনের দায়িত্ব লাভ করে।
জাম্বুরীর অংশগ্রহণকারী সকল স্কাউটবৃন্দ ০৪টি ভিলেজে ও ০৮টি সার ক্যাম্পে বিভক্ত হয়ে পর্যায়ক্রকভাবে সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে।
দেশের পর্যটন ও ঐতিহ্যবাহী স্থানকে স্কাউটদের নিকট পরিচিত করার জন্য ভিলেজের নামকরণ করা হয়েছে যথাক্রমে কুয়াকাটা, সেন্টমার্টিন, পতেঙ্গা, ও কক্সবাজার এবং ০৮টি সার ক্যাম্পের নামকরণ করা হয়েছে যথাক্রমে নিঝুম দ্বীপ, কটকা, বাঁশবাড়ীয়া, গুলিয়াখালী, মান্দারবাড়ী, শ্যামলাপুর, সোনাদিয়া ও তরুয়া সাব ক্যাম্প। জাম্বুরী মেইন এরিনার নামকরণ করা হয়েছে। জাতির পিতার নামে `বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এরিনা।মৌচাকের সবুজ শ্যামল বৃক্ষ আচ্ছাদিত মনোরম পরিবেশে দেশ-বিদেশী স্কাউট সদস্যগণ নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা। বিনিময়, দক্ষতা প্রদর্শন, ভাতৃত্বের বন্ধনকে জোরদার করে অভিজ্ঞতাকে আরো সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে বলে অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন।