19.9 C
New York
সোমবার, এপ্রিল ১৫, ২০২৪
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

রাজশাহীতে কাজী সমিতির নাম ব্যবহার করে মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ কাজী জহুরুলের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী জেলা নিকাহ্ রেজিস্ট্রার সমিতির একাধিক নাম ব্যবহার করে জেলা রেজিষ্ট্রারসহ নিকাহ্ রেজিষ্ট্রারদের নামে বিভিন্ন ধরণের হয়রানীমূলক মামলা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কাজী জহরুল আলমের বিরুদ্ধে। এই সকল সমিতিতে যাদের পদ-পদবী দেয়া হয়েছে কমিটির বিষয়ে অনেকেই অবগত নাই বলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। দায়েরকৃত মামলায় সমিতির রেজুলেশন ব্যবহার করাও হয়নি বলে জানাগেছে। নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার সমিতির কথিত এ নেতা নিকাহ্ রেজিস্ট্রারপ্রাপ্ত লাইসেন্স আবেদনে মিথ্যা ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার কওে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

জানাগেছে, কথিত এ কাজি সমিতির নেতা সাবেক রাজশাহী জেলা রেজিস্ট্রার ইলিয়াস হোসেনের উপর হামলা করে। এ ঘটনায় জেলা রেজিষ্ট্রার বাদি হয়ে নগরীর রাজপাড়া থানায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ মামলা থেকে বাঁচতে সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার-সহ একাধিক কাজীকে আসামী করে বিজ্ঞ আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করেন কাজি জহুরুল আলম। মামলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজীকেও ব্যবহার করেছেন। সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার-সহ একাধিক কাজীদের নামে দেয়া মামলায় তিনি ৪০লাখ টাকা ক্ষতিপূরুণ দাবি করেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

পরবর্তীতে অনেক দেন-দরবার শেষে রাজশাহী সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ রবিউল ইসলামের অফিসকক্ষে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ৩টি মামলার অপোষ-মিমাংসা করেন কাজী মোঃ জহরুল আলম। কিন্তু টাকা নিয়েও তিনি থেমে যাননি, পূণরায় দু’টি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার একটির বাদী তিনি নিজে এবং অপর মামলার বাদী সাবেক নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ ইনসান আলী।

কাজি জহুরুল আলমের এরুপ কার্যকলাপে কাজীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। সবমিলে কাজী মোঃ জহুরুল আলম একাই পুরো কাজী সমাজকে বির্তর্কীত করেছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন কাজী সমিতির একাংশের কাজীগণ। তাদের এই দ্বন্দে সাধারন মানুষের মাঝে কাজী সমাজের প্রতি বিরুপ ধারণারও সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও একধিক সহযোগী কাজী নিয়োগ দিয়ে মোটা অর্থের বিনিময়ে বাল্যবিবাহ্ দিচ্ছে, এতেবাল্য বিবাহ্ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে।

গত বছরের নভেম্বও মাসের ১৪ তারিখে জেলা রেজিস্ট্রার মতিউর রহমান (রাসিক ৪ নং ওয়ার্ডের) নিকাহ্ রেজিস্ট্রার মোঃ জহিরুল ইসলামকে রাসিক (৫ নং ওয়ার্ডের) শূণ্য অধিক্ষেত্রের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেন। নগরীর এই কাজীকে পরিচালনা করেন চারঘাটের কাজী মোঃ জহুরুল আলম। পাশাপামি কোর্ট এলাকায় একাধিক সহকারী কাজীও নিয়োগ দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে। তাদের মোটা অংকের আয়ের মূল উৎস এক অনুষ্ঠানে বাল্যবিবাহ্ ও স্ত্রী কতৃক স্বামীকে ৯০দিন পূর্বের তারিখ দেখিয়ে অবৈধভাবে তালাক ও বিবাহ্ রেজিষ্ট্রী করা। এমনই অভিযোগের কথা পুরো কোট অঞ্চল জুড়ে মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। তাদের এরুপ কর্মকান্ডের কথা রাজশাহীর বারের অনেক আইনজীবি ও মোহরীরাও এ প্রতিবেদককে জানান।

উপরোক্ত বিষয়গুলির ভূক্তভোগী কাজীদের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহী জেলা মুসলিম নিকাহ্ রেজিস্ট্রার সমিতির সভাপতি কাজী মোঃ নূরুল আলম। তিনি বলেন, কাজী জহরুল আলমের স্থায়ী ঠিকানা গ্রাম হাবাসপুর, থানা, বাঘা জেলা রাজশাহী। কিন্তু তিনি তথ্য গোপন তরে গ্রাম পরানপুর থানা চারঘাট জাল কাগজপত্র দাখিল করে, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে (৫নং) চারঘাট ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। গত ১৫/৯/২০০৯ তারিখে চারঘাট সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ৩২৮৬নং জমির দলিল, টিপ সহি নং-৫২৭৩, হাবাসপুর বাঘা ঠিকানা দিয়ে জমি রেজিষ্ট্রী করেছেন। জেলা রেজিস্ট্রার গত ১৯/১০/২০২০ তারিখে (১৭নং) মামলার আসামী কাজী মোঃ জহরুল আলম জেল হাজতে থাকায় সাময়িক ভাবে তার নিকাহ্ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স স্থগিত করেন। লাইসেন্স স্থগিত থাকায় মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী (৬ নং) ভায়া লক্ষিপুর ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিস্ট্রার মোঃ আব্দুল ওয়াদুদকে অতিরিক্ত (৫নং) চারঘাট ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ ইলিয়াস হোসেন।

এরপর আসামী কাজী জহুরুল আলম জামিনে মুক্ত হয়ে (৫ নং) চারঘাট ইউনিয়নের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য দলবদ্ধ হয়ে জেলা রেজিস্ট্রারকে চাপ দেন। তিনি অপারগতা দেখালে তাঁকে অকাথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারমুখি আচারণ করেন। পরে জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ ইলিয়াস হোসেন বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে রাজপাড়া থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। সেই মামলাতেও তাকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, জেলা রেজিস্ট্রার কতৃক বাদী হয়ে কাজী মোঃ জহরুল আলমের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা থেকেই বাঁচতেই তিনি একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার ও কাজীদের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সাবেক প্রধান সহকারী ইসমাইল হেসেন জানান, আমাকে হয়রানী ও ব্ল্যাকমেল করার লক্ষ্যে মিথ্যা মামলা দিয়েছে কাজী মোঃ জহরুল আলম ও সাবেক নিকাহ্ রেজিস্ট্রার মোঃ ইনসান আলী। তাদের সাথে আমার পূর্বের কোন শত্রুতা নেই। যাহা সকল কাজীরাই জানে।

জানতে চাইলে সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার ইলিয়াস হোসেন জানান, কাজী মোঃ জহুরুল আলম একটি হত্যা মামলায় জেলহাজতে থাকার কারনে অতিরিক্ত কাজী হিসেবে মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ নামের এক কাজীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে কাজী মোঃ জহুরুল আলম জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আমার নিকট আসে এবং তার দায়িত্ব ফিরিয়ে দিতে বলেন। আমি তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি নেয়ার পরমর্শ দেই। এতে তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে আমাকে মারমুখি আচারণ করেন। পরে আমি আমি তার বিরুদ্ধে নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করি।

জানতে চাইলে সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, আমার অফিসে অনেকের উপস্থিতিতে মিমাংসা হয়েছিলো। তবে কত টাকার বিনিময়ে তা আমার জানা নেই।

কাজী মোঃ জহুরুল আলমের দায়ের করা মামলায় ৮জন স্বাক্ষী রয়েছে।

স্বাক্ষী মোঃ আব্দুল জাব্বার জানান, আমি সমিতি ছেড়ে দিয়েছি। মামলায় স্বাক্ষীর বিষয়ে আমাকে অবগত করেছে কাজী মোঃ জহুরুল। কাজী মোঃ মিকাইল হোসেন জানান, আমি সমিতি ছেড়ে দিয়েছি। মামলায় বিষয়ে জানা নাই। কাজী আব্দুর রশিদ তালুকদার জানান, আমি রাজশাহী জেলা রেজিস্ট্রার মুসলিম কল্যান সমিতিতে আছি। তবে মামলায় আমাকে স্বাক্ষী করেছে, তা আমার জানা নাই। কাজী মোঃ শামশুল ইসলাম জানান, আমি রাজশাহী জেলা নিকাহ্ রেজিস্ট্রার ও কাজী কল্যাণ সমিতিতে আছি। তবে মামলায় আমাকে স্বাক্ষী করেছে, তা আমার জানা নাই। কাজী মোঃ আবুল বাশার জানান, আমি রাজশাহী জেলা নিকাহ্ রেজিস্ট্রার কাজী কল্যান সমিতিতে আছি। তবে কি বিষয়ে মামলা আর কি বিষয়ে স্বাক্ষী করেছে আমার জানা নাই। কাজী মোঃ খয়বর হোসেন জানান, আমার সঠিক মনে নাই কোন সমিতিতে আছি। তবে রাজশাহী জেলা কাজী কল্যাণ সমিতি অথবা নিকাহ্ রেজিস্ট্রার কল্যান সমিতে হতে পারে। কি মামলায় স্বাক্ষী করেছে, তা আমার মনে পড়ছে না। কাজী মোঃ মোসারফ হোসেন জানান, আমি বাংলাদেশ মুসলীম ও ম্যারেজ কল্যান সমিতিতে আছি। তবে মামলা বিষয়ে স্বাক্ষী তা আমার জানা নাই।

এ ব্যপারে মুঠো ফোনে কাজী জহুরল আলমকে আপনি কোন কোন কাজি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানাতে চাইলে তিনি সঠিকভাবে সমিতির নাম উচ্চারণ করতে পারেননি। জেলা রেজিষ্ট্রারসহ কাজিদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যাদের নামে মামলা দায়ের করেছি তারা সকলেই চাপাইনবাবগঞ্জের মানুষ। সেখানে চাকরি করে আবার রাজশাহীতে কাজীর কাজ করে। কাহারো কোন বৈধ কাগজপত্র নাই, আমি চেয়েছি দেখাতে পারেনি। কাজী মোঃ নূরুল আলম আমার বিষয় নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এছাড়াও তিনি অশ্লিল ভাষায় মন্তব্য করেন নূরুল আলমকে নিয়ে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলা খরচ বাবদ একটি মাধ্যম দিয়ে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলো। তবে সরাসরি আমি টাকা হাতে ধরিনি। ঠিকানা দুইটার বিষয়য়ে জানাতে চাইলে তিনি স্বিকার করে বলেন, একটি বাঘা উপজেলার হাবাসপুওে এবং চাঘাটা উপজেলার পরানপুরে বলে নিশ্চিত করেছেন।

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
আজকের রাজশাহী
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

বিনোদন

- Advertisment -spot_img

বিশেষ প্রতিবেদন

Discover more from News Rajshahi 24

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading