8.3 C
New York
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

রাজশাহী জেলা আ.লীগে একের পর এক কার্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের কোন্দল-কলহ পরিহার করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারাসহ জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে সতর্কও করেন তিনি।

কিন্তু সেই নির্দেশ যে জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা কানে তোলেননি তা বোঝা গেল নতুন করে আরও একটি দলীয় কার্যালয় খোলার মধ্য দিয়ে।

জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের একাংশ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আরও একটি দলীয় কার্যালয় খুলেছেন নগরীর রানীবাজার এলাকায় একটি অর্পিত সম্পত্তি ভবনে। এ নিয়ে একটি নির্মাণাধীনসহ রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চারে। নতুন আরেকটি কার্যালয় খোলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের একাংশের নেতাকর্মীরা।

তাদের অভিযোগ, অনেক দিন ধরেই রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ চলছে নেতাদের খেয়ালখুশিমতো। এ কারণে নেতাকর্মীরা রয়েছেন ভাসমান অবস্থায়। দলের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে চার ভাগে বিভক্ত হয়ে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটি হয়। কমিটির সভাপতি হন মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক হন আব্দুল ওয়াদুদ দারা। গত ৮ ডিসেম্বর কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। ইতোমধ্যে সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ প্রয়াত হয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সিনিয়র সহসভাপতি অনিল কুমার সরকার।

এদিকে নতুন কমিটি দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে লক্ষ্মীপুর মোড়ের দলীয় কার্যালয় বাদ দিয়ে নগরীর অলকার মোড়ে একটি ঝাঁপ ফেলা দোকান ঘরে নতুন কার্যালয় খোলা হয়। নতুন এই কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ হাতেগোনা কয়েকজন নেতা মাঝে মাঝে বসেন। অন্যদিকে লক্ষ্মীপুর মোড়ের কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদসহ কার্যনির্বাহী কমিটির কয়েকজন সদস্য বসেন। বিভিন্ন উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা লক্ষ্মীপুর মোড়ের দলীয় কার্যালয়ে আসা-যাওয়া করেন।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নগরীর রানীবাজারে একটি অর্পিত সম্পত্তি ভবন জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লিজ নিয়ে তাতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা। ইজারা নেওয়া এই পরিত্যক্ত ভবনে হয়েছে মিলাদ মাহফিল। এই বাড়িটিতে কয়েকটি পরিবার বসবাস করছিলেন এতদিন। বাড়িটিতে দলীয় সাইনবোর্ড লাগিয়ে পরিবারটিকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। কয়েকদিন ধরে বাড়িটি সংস্কার করা হচ্ছে। সাজানো হচ্ছে দলীয় কার্যালয় করার জন্য। অর্পিত সম্পত্তি ভবনে নতুন কার্যালয় করায় দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

দলীয় সূত্রে আরও জানা যায়, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের জন্য আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন উঠছে নগরীর সিটিবাইপাস তেরখাদিয়া এলাকায়। তিনতলা ভবনটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষের পথে। কিছুদিনের মধ্যেই ভবনটি উদ্বোধন হবে।

আরও জানা যায়, ২০১৭ সালে জেলা আওয়ামী লীগের স্থায়ী কার্যালয় করতে নগরীর তেরখাদিয়া এলাকায় ১০ কাঠা জমি কিনে দেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। সেখানে চার হাজার স্কয়ার ফুটের একটি নতুন ভবনও করে দিচ্ছেন এমপি এনামুল হক। রাজশাহী সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সম্প্রতি নির্মাণাধীন দলীয় কার্যালয়টি পরিদর্শন করেন।

এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দলীয় কার্যালয়ের জন্য জায়গা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। আবেদনের ভিত্তিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি নগরীর রানীবাজার এলাকার একটি অর্পিত সম্পত্তি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জায়গাটির পরিমাণ ৮ কাঠা। এরপর ওই স্থানটি জেলা আওয়ামী লীগের শাখা কার্যালয় বলে ব্যানার টানানো হয়েছে। এমপি এনামুলের করে দেওয়া নির্মাণাধীন ভবনেও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় বলে আরেকটি বড় ব্যানার টানানো আছে। লক্ষ্মীপুর মোড়েও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের নামে বড় সাইনবোর্ড রয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে এমপি এনামুল হক বলেন, ‘আমি দলের নামে জমি কিনে তা জেলা আওয়ামী লীগের নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছি। ২০১৭ সালে জেলা আওয়ামী লীগের তখনকার কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় রেজিস্ট্রি দলিল হস্তান্তর করেছি। তারা গ্রহণ করেছেন। এখন তারা মনে করছে আসাদুজ্জামানের (জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক) সময় এই জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে। এখন সেখানে পার্টি অফিস করবে না। এটা একটা জাস্ট পার্সোনাল জেলাসি থেকে করছে।

এমপি এনামুল হক আরও বলেন, সরকারি জায়গায় কোনোভাবেই পার্টি অফিস করার সুযোগ নেই। পার্টি অফিসের জন্য আমি জমি দিয়েছি বলেই তো কেউ কেউ জেলাসি করে আরেকটা অফিস নিচ্ছেন। আগে করলেই তো আমার দেওয়া লাগত না। প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীতে এসে কোন্দল-কলহ পরিহার করতে কঠোর নির্দেশ দিয়ে গেছেন। এখন আমরা এসব কী দেখছি!

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, এমপি এনামুল হক জেলা আওয়ামী লীগকে জায়গা দিয়েছেন। তিনি দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমতি নিয়ে সেখানে ভবনও করে দিচ্ছেন। এখন সেটাকে অবজ্ঞা করে অর্পিত সম্পত্তি ভবনে কার্যালয় করাটা খারাপ। এর মাধ্যমে দলের মধ্যে শুধু বিভাজন তৈরি হবে। এ উদ্দেশ্যেই এটা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশকে তারা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘কোনোভাবেই দলীয় বিভেদ হওয়ার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের নামে যে কেউ সম্পত্তি দান করে দিতেই পারেন। চলতি কমিটি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটাই সিদ্ধান্ত। যে জায়গাটি আমরা লিজ নিয়েছি, সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের অফিস হবে। তেরখাদিয়ায় নির্মাণাধীন অফিসের তা হলে কী হবে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা আমিও বলতে পারি না।

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
আজকের রাজশাহী
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

বিনোদন

- Advertisment -spot_img

বিশেষ প্রতিবেদন

error: Content is protected !!

Discover more from News Rajshahi 24

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading