
নিজস্ব প্রতিবেদক : মানববন্ধন আয়োজকদের হাত থেকে ব্যানার কেড়ে নিয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা ডাবলু সরকারের সমর্থকেরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে মানববন্ধন আয়োজকদের হাত থেকে ব্যানার কেড়ে নিয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা ডাবলু সরকারের সমর্থকেরা।
রাজশাহীতে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ তুলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে অপসারণের দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধনে হামলা চালানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ‘সচেতন রাজশাহীবাসী’র ব্যানারে নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
আয়োজকদের অভিযোগ, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের ভাই জেডু সরকারের নেতৃত্বে একদল লোক এসে ব্যানার কেড়ে নিয়ে মানববন্ধন পণ্ড করে দেন। একটি অশ্লীল ভিডিওকে কেন্দ্র করে ওই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানা যায়, মানববন্ধনের ব্যানারে লেখা ছিল—ডাবলু সরকারের নোংরা ভিডিও/রাজনীতিতে অশনিসংকেত ও সমাজের জন্য বিপজ্জনক/অবিলম্বে ডাবলু সরকারকে রাজনীতি থেকে অপসারণ করতে হবে। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে এ মানববন্ধন শুরু হয়। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এ মানববন্ধনে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর রাজশাহী মহানগর শাখার সাবেক সভাপতি আবু রায়হান ওরফে মাসুদ। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক। তিনি ছাড়া সেখানে বক্তব্য দেন বেলাল হোসেন, আসাদুজ্জামান ও কৃষক লীগের রাজপাড়া থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান। কামরুজ্জামানের বক্তব্য চলাকালে বেলা ১১টা ৫ মিনিটের দিকে কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে ব্যানার কেড়ে নেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই হামলায় নেতৃত্ব দেন ডাবলু সরকারের ভাই নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ সরকার সেডু। এসেছিলেন আরেক ভাই মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকারও। ২৫ থেকে ৩০ জন এতে অংশ নেন। তবে নগর আওয়ামী লীগের কোনো নেতা ছিলেন না। মানববন্ধন শুরুর ২৫ মিনিটের মাথায় হামলার ঘটনা ঘটে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজশাহী নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে মানববন্ধন শুরুর ২৫ মিনিটের মাথায় হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। একপর্যায়ে ধাওয়া দিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নারী-পুরুষকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় জিরোপয়েন্টে ফুল বিক্রেতার টব নিয়েও ধাওয়া দিতে দেখা যায় হামলাকারীদের।
এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে শাহনেওয়াজ সরকার বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারির বিরুদ্ধে মানববন্ধন। আপনারা কী করছেন?’ এ সময় হামলাকারীরা মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের গালিগালাজ করেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের সরিয়ে দিয়ে জিরোপয়েন্টে অবস্থান নেন ডাবলু সরকারের দুই ভাই এবং তাঁদের অনুসারীরা। পরে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন তাঁদেরও সরিয়ে দেন।
এই মানববন্ধনের আয়োজকেরা পুলিশের অনুমতি নিয়েছিলেন। তারপরও হামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য ফোন করা হলে শাহনেওয়াজ সরকার ফোন ধরেননি।
কেন এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল, জানতে চাইলে আবু রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাবলু সরকারের এই অশ্লীল ভিডিও আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে কলঙ্কিত করেছে। তার নৈতিক স্খলন ঘটেছে। আমরা এটা মেনে নিতে পারিনি। আমরা এ নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। বিএনপির লোকজন ফোন করে টিটকারি দিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ডাবুল সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। আওয়ামী লীগ কলঙ্কিত হলে তাদের নেতারা মানববন্ধনে যোগ দিলেন না কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে তিনি এ আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরাও আসবে। কাউকে না কাউকে শুরু করতে হবে। তাই তিনি শুরু করেছেন।
এর আগে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার তাঁকে নিয়ে একটি আপত্তিকর ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেছেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নগরের বোয়ালিয়া থানায় তিনি মামলাটি করেন। এতে তিনি ভিডিওটিকে সম্পাদনা করা হয়েছে বলে দাবি করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, একটি অনলাইন পোর্টালের ফেসবুক পেজে কে বা কারা তাঁকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে এডিট করে অশ্লীল ভিডিও তৈরি করেছে। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়ার কথা ওই অনলাইন পত্রিকায় লেখা থাকলেও এখন পর্যন্ত ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটে পাওয়া যায়নি। অজ্ঞাতনামা কে বা কারা নিজ স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকসহ অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে তাঁকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
ওই ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ডাবলু সরকার প্রথম আলোকে তখন বলেছিলেন, ভিডিওটি এডিট করা। শরীরের ওপরের অংশটি আমার। আমি অনেক সময় জিমে খালি গায়ে থাকি। সেখান থেকে ভিডিওটি নিয়ে অন্য এক ব্যক্তির শরীরের নিচের অংশের সঙ্গে জোড়া দেওয়া হয়েছে। তারপরও এই ভিডিওতে আমার কোনো কথা নেই। কোনো নারী নেই। এ নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই। শুধুই আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এটা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি মামলা করেছি। পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। আর সবার ওপরে আল্লাহ আছে। আল্লাহ দেখছেন সবকিছু।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই ভিডিও নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের স্মার্টফোনে ভিডিওটি পাঠানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে আয়োজিত মানববন্ধনের ব্যাপারে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা ডাবলু সরকারের মুঠোফোনে কল করা হলেও সেটি ব্যস্ত পাওয়া যায়।
আর মানববন্ধনে হামলা চালানোর অভিযোগের বিষয়ে ডাবলু সরকারের ভাই জেডু সরকার বলেন, জনসাধারণ মানববন্ধনে বাধা দিয়েছেন। তিনি বাজারে যাওয়ার সময় এটা দেখেছেন। ব্যানারের কাছে যাননি। সূত্র : প্রথম আলো।