Wednesday, March 29, 2023

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রাজশাহীর আদালতে আনা হয়নি মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জঙ্গিকে

নিউজ রাজশাহী ডেস্ক: নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে গাজীপুর থেকে হলি আর্টিজান হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি শীর্ষ জঙ্গি নেতা শরিফুল ইসলাম ওরফে তালহাকে রাজশাহীতে পাঠাতে রাজি হয়নি কারাকর্তৃপক্ষ। বাগমারা থানার একটি মামলায় তাকে আজ মঙ্গলবার রাজশাহীর সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার কথা ছিল।

কিন্তু কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা চিঠি পাঠিয়ে আদালতকে জানিয়েছেন, নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে শরিফুল ইসলামকে জেলখানা থেকে রাজশাহী পাঠানো যাচ্ছে না। ফলে ওই মামলার জন্য পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত।

এদিকে, হলি আর্টিজান হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আরেক আসামি আব্দুস সবুর খান ওরফে হাতকাটা মাহফুজকে তানোর থানার একটি মামলায় আদালতে হাজিরার জন্য আনা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীর সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তাকে হাজির করে পুলিশ। এর আগে সকালে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তাবলয়ের মধ্য দিয়ে বের করা হয় তাকে। সোহেল মাহফুজকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সময় কারাকর্তৃপক্ষ ভিডিও করে রাখে। পরে আদালত থেকে ফেরার পরও কারাকর্তৃপক্ষ মাহফুজকে গ্রহণেরর সময় ভিডিও ধারণ করে।

আদালত সূত্র জানায়, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নীরেন্দ্রনাথ সরকার নামে এক চিকিৎসককে হত্যার পরিকল্পনা করে জঙ্গিরা। এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট থানায় জিডি করেছিলেন নীরেন্দ্রনাথ। ওই জিডির সূত্র ধরে প্রথমে আমিনুল ইসলাম ওরফে রুমি ও এনামুল হক ওরফে সবুজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্য ডিভাইস পর্যালোচনায় ‘আনসার রাজশাহী’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের ব্যানারে নীরেনকে হত্যার পরিকল্পনার ছক হাতে পায় পুলিশ। এই পরিকল্পনার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ছিল শরিফুল ইসলাম ওরফে খালিদ ওরফে তালহা।

আমিনুল, এনামুল ও শরিফুলকে আসামি করে ২০০৯ সালে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করে পুলিশ। মামলাটি বর্তমানে রাজশাহীর সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। এ মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। এ মামলাতে শরিফুলকে রাজশাহীর আদালতে হাজির করার কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় কারা কর্তৃপক্ষ তাকে রাজশাহী পাঠাতে রাজি হয়নি।

অপরদিকে, তানোর থানার আরেকটি মামলায় আদালতে হাজিরার দিন ছিল শীর্ষ জঙ্গি হাতকাটা মাফফুজের। ২০১৭ সালের ১২ জুন রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের ডাঙাপাড়া গ্রামে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। স্কুলশিক্ষক রমজান আলীর বাড়ি ঘিরে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

বগুড়ার কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও রাজশাহী জেলা পুলিশ যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের সময় ওই বাড়ি থেকে পাঁচটি গুলিসহ পিস্তল উদ্ধার করা হয়। পরদিন ঢাকা থেকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এসে ওই বাড়িতে অভিযান শুরু করে। এরপর ওই বাড়িতে পরপর তিনটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর ‘অপারেশন রিবার্থ’ নামের এ অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের তৎকালীন অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন) নিশারুল আরিফ।

তিনি জানিয়েছিলেন, এ অভিযানে জঙ্গি আস্তানা থেকে তিনটি সুসাইডাল ভেস্ট, একটি বোমা, বেশ কিছু বিস্ফোরক, একটি ল্যাপটপ, একটি পিস্তল, পাঁচটি গুলি, জিহাদি বই ও সিডি, নগদ দুই লাখ টাকা, দুটি মোটরসাইকেল ও পাঁচটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। মামলার অন্যতম আসামি আব্দুস সবুর খান ওরফে সোহেল ওরফে হাতকাটা মাহফুজ। এই মামলাটিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাঞ্চল্যকর মামলার তালিকাভুক্ত।

তানোর থানার এই মামলাটিও বর্তমানে রাজশাহীর সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। মঙ্গলবার আসামিদের হাজিরার দিন ছিল। জামিনে থানা অন্য আসামিরা নিজ দায়িত্বেই হাজির হন। তবে হাতকাটা মাহফুজ হলি আর্টিজান মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি হওয়ায় রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। দেশের আলোচিত জঙ্গিকে আদালতে হাজির করা হয় কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থায়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভেকেট সাদিকুল ইসলাম জানান, মামলার এক নম্বর আসামি আদালতে হাজির না থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। তবে মাহফুজসহ অন্য আসামিদের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়েছিল। মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে ২৯ মার্চ।

রাজশাহী বিভাগ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়