8.8 C
New York
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সভাপতি-সম্পাদকের দ্বন্দ্বে কার্যতঃ অকেজো হয়ে পড়েছে রাজশাহী জেলা যুবলীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী জেলা যুবলীগ নেতৃবৃন্দের দ্বন্দ্ব চরমে পৌছেছে। কোন সভা, সমাবেশ, প্রচার প্রচারণায় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একসাথে পাওয়া যাচ্ছে না। নেতৃবৃন্দরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। প্রেক্ষিতে জেলা যুবলীগ কার্যতঃ অকেজো হয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ রাজশাহী জেলা যুবলীগের কমিটি হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালের ১৬ মার্চ। নানা অজুহাতে জেলা যুবলীগের নতুন কমিটি আর হয়নি। কেন্দ্রেরও বিশেষ চাপ না থাকায় সম্মেলনের তাগিদও নেই কারও। এর ফলে ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠনের দলীয় কর্মকাণ্ড রাজশাহীতে প্রায় নেই বললেই চলে। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ছেড়ে যুবলীগের বুড়ো নেতারা ব্যবসা-বাণিজ্য, ঠিকাদারি ও জমি কেনাবেচার কাজে মগ্ন। পাশাপাশি অনেক নতুন কমিটি না হওয়ায় স্বেচ্ছাচারিতাসহ পরস্পরের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ এখন চরমে। এমনকি বর্তমান কমিটির সভাপতি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে তৃণমুলের নতুন কমিটিসহ বর্ধিত সভার কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।

প্রায় দেড়যুগ একই নেতৃত্বে চলা রাজশাহী জেলা যুবলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ১৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত জেলা ও মহানগর শাখার বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা কমিটি ভেঙে দেওয়ার পক্ষে মতামত তুলে ধরেন। তাদের মতে, একই নেতৃত্বে চলায় দুই ইউনিটের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। দিনব্যাপী দুই পর্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের কাছ থেকে সরবরাহ করা ফর্মের মাধ্যমে বর্তমান কমিটির বিষয়ে মতামত নেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

সেদিন সকালে পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী রাজশাহী রাইফেলস ক্লাবে জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই ইউনিটের সভাপতি আবু সালেহর সভাপতিত্বে সভায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আজম সেন্টুসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। সভায় যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম সৈকত জোয়ার্দ্দার, মুতিউর রহমান বাদশা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ড. হেলাল উদ্দিন অতিথি ছিলেন। তৃণমূল নেতাকর্মীরা দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে একই নেতৃত্বে চলা জেলা যুবলীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে দ্রুত সম্মেলন আয়োজন ও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবি জানান। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা সংগঠনের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করে দ্রুত জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার করেন।

তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, দেড় যুগের বেশি সময় যুবলীগের জেলা কমিটির শীর্ষ পদে থাকা নেতৃত্বের অবসান জরুরি। বর্তমান কমিটি দুটির অনেক নেতাকর্মী নানাবিধ অপকর্মে জড়িয়েছেন। এতে সংগঠনের ভাবমূর্তি ও সুনাম নষ্ট হচ্ছে। কেউ ভূমিদস্যুতায়। কেউবা টেন্ডারবাজিতে। অনেকেই সংগঠনকে পারিবারিক স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। অথচ তৃণমূল নেতাকর্মীদের কোনো খোঁজই তারা রাখেন না।

প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ এর পক্ষ থেকে রাজশাহী জেলা শাখার সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক পদ-প্রত্যাশীদের জীবন-বৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরীত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। পদ-প্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল। চলতি বছরের ১৮ই ফেব্রুয়ারী থেকে ২০ই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রধান কার্যালয়ে জীবন বৃত্তান্ত জমা নেওয়া হয়। নানা আলোচনা সমালোচনায় উঠে আসে জেলা যুবলীগের শীর্ষ দুই পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের পরিবর্তন। ফলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে ইতোমধ্যে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন ৪ ডজন নেতা।

জানা গেছে, জেলা যুবলীগের সভাপতি আবু সালেহ ২০০৪ সাল থেকে এখনো দায়িত্বে আছেন। জেলা সেক্রেটারি খালিদ ওয়ার্সি কেটুর মৃত্যুর পর আলী আজম সেন্টু ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। সূত্র আরও জানায়, জেলা যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকের বয়স ৫৫ থেকে ৬৬ বছর হয়ে গেছে। এ বয়সে তাদের যুবলীগের নেতৃত্বে থাকার কথা নয়। অন্যদিকে অনেকেই বহু বছর ধরে যুবলীগ করছেন; কিন্তু তারা কোনো পদ পাননি।

জেলা যুবলীগ নেতৃবৃন্দ জানান, রাজশাহী জেলা শাখার আওয়ামী যুবলীগের কাউন্সিল হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ। তিন বছর মেয়াদী হলেও এরমধ্যে পার হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ বছর। আবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক খালিদ ওয়ার্সি কেটু ২০১৮ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মারা গেলেও প্রায় ৫ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিয়ে সংগঠনের কার্যক্রম নাম কে ওয়াস্তে পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রেক্ষিতে জেলা যুবলীগের সভাপতি সকল সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম স্বেচ্ছাচারিভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তারা আরোও জানান, কেন্দ্রীয় যুবলীগ ২০১৭ সালের ১৫ মে জেলার ১০১ সদস্য কমিটির ৭ টা পদ শূণ্য রেখেই রাজশাহী জেলা যুবলীগের কমিটি অনুমোদন করেন এবং উল্লেখ করেন শূণ্য পদ গুলো পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় যুবলীগ থেকে পূরণ করা হবে। কিন্তু কমিটার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় যুবলীগ সেই ৭ টা শূণ্য পদ অনুমোদন দেইনি।

জেলা যুবলীগের সভাপতি আবু সালেহ এর একক সিদ্ধান্তে ও স্বেচ্ছাচারিতায় সেই ৭ টা শূণ্য পদের ৭ জন কে চিঠি ধরিয়ে দেয়া হয়। পদ গুলো হলো সহ-সভাপতি পদে অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সেজানুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক পদে মো. বাবুল হোসেন, সহ-সম্পাদক পদে কামাল হোসেন ও নাজমুল হোসেন, সদস্য পদে জয়নাল আবেদীন ও মশিউর রহমান জুয়েল। জেলা যুবলীগের নেতারা এটার প্রতিবাদ করলে জেলা যুবলীগের সভাপতি আবু সালেহ তাদের বলেন শূণ্য ৭ টা পদ কেন্দ্রীয় যুবলীগ পরবর্তীতে অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু অনুমোদনের কপি জেলা যুবলীগের নেতারা বারবার দেখতে চাইলে সভাপতি আবু সালেহ এখন পর্যন্ত অনুমোদনের কপি দেখাতে পারেনি। পরবর্তীতে জানা যায় সভাপতি আবু সালেহ স্বজনপ্রীতি ও অর্থের বিনিময়ে পদ গুলো দিয়েছেন।

অভিযোগ আছে সভাপতি গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার কমিটি ভাঙ্গেন ও পূণ:কমিটি গঠন করেন। এমনকি আর্থিক লেন-দেনের মাধ্যমে সভাপতির একার সিদ্ধান্তে এসব কমিটি গঠন করা হয়। উদাহরণ দিতে সুত্র জানায়, নওহাটা পৌরসভার যুবলীগের বর্তমান আহবায়ক শেখ ফরিদকে ২০০৪ সালে দলীয় শৃঙখলা ভঙ্গের দায়ে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। পরে ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর তাকেই আহবায়ক করা হয়। এ ছাড়াও জনি ইসলাম কাটাখালি পৌরসভার যুবলীগ আহবায়ক থাকা অবস্থায় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করায় উক্ত কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। বর্তমানে তাকেও সভাপতি কাটাখালি পৌরসভার যুবলীগ আহবায়ক করেন। আবার পবার দর্শনপাড়া ইউনিয়নের সভাপতি সারওয়ার জাহান মিল্টনকে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট করায় কমিটি ভেঙ্গে দিলেও তাকেও পরে ওই ইউনিয়নের যুবলীগ কমিটির আহবায়ক করা হয়। যা জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকসহ কোন নেতা-কর্মীকে জানানো হয়নি। নেতৃবৃন্দ বলেন সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতা ও অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এসব নতুন কমিটি করা হয়।

নেতৃবৃন্দরা আরো জানান, আপনারা লক্ষ্য করেছেন-গত ২৯ জানুয়ারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে রাজশাহী জেলা যুবলীগের পক্ষে কোন ব্যানার-ফেষ্টুন ছিল না। সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে জেলা যুবলীগ একেবারে স্থবির হয়ে পড়েছে। যে কারণে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর দুর্গাপুর উপজেলা যুবলীগের সভা পন্ড হয়ে যায়। একই কারণে বাগমারা ও পুঠিয়ায় প্রস্তুতি সভা করা সম্ভব হয় নি।

আবার সামনে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে পুনরায় নির্বাচিত করতে গণসংযোগ, প্রচার ও লিফলেট বিতরণে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আজম সেন্টুর সাথে নেতাকর্মী থাকলেও সভাপতির কোন পদক্ষেপ ও কর্মসূচী নেতা-কর্মীরা জানে না। সবমিলিয়ে রাজশাহী জেলা যুবলীগের বর্তমান অবস্থা একেবারে নাজুক ও অন্তর্দ্বন্দ্বেভরা। খুব শীঘ্রই নতুন কমিটি না দিলে রাজশাহী জেলা যুবলীগের অবস্থান বিলিন হবে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

উল্লেখ্য জেলা যুবলীগের সভাপতি আবু সালেহ রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আজম সেন্টু রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ এর আর্শিবাদপুষ্ট বলে জানা যায়।

এব্যাপারে জেলা যুবলীগ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমার পক্ষ থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সাতজন সদস্য আন্তর্ভূক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ওই সময় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন খালেদ ওয়ার্সি কেটু। তিনি ঁেবচে নেই-বিধায় মন্তুব্য করা ঠিক হবে না। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দ্বন্দ্বের কারণে জেলা যুবলীগ ভেঙ্গে পড়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাংগঠনিকভাবে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্বে অবহেলা করিনি। তবে সভাপতি সাথে দুরত্ব বাড়ে পবা উপজেলার ইউনিয়ন ও পৌরসভার কমিটিকে কেন্দ্র করে। সভাপতি এ ক্ষেত্রে একক সিদ্ধান্তেই বিতর্কিত ব্যক্তিদের আহবায়ক কমিটির দায়িত্ব দিয়েছেন। যা নিয়ে সাংগঠনিকভাবে সংগঠন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বর্তমানে রাসিক নির্বাচনে বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে গণসংযোগ, প্রচার ও লিফলেট বিতরণে আপনাকেসহ নেতৃবৃন্দকে দেখা যাচ্ছে সভাপতি থাকছেন না কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সভাপতি এখন কার্যালয়ে আসেন না। তাই আমাকে একাই নেতৃবৃন্দের সাথে নিয়ে নির্বাচনে গণসংযোগ, প্রচার ও লিফলেট বিতরণ করতে হচ্ছে।

এব্যাপারে জেলা যুবলীগ সভাপতি আবু সালেহ জানান, সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে সংগঠনের বাইরে কোন বলার সুযোগ নাই। এরপর তিনি মোবাইলে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
আজকের রাজশাহী
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

বিনোদন

- Advertisment -spot_img

বিশেষ প্রতিবেদন

Discover more from News Rajshahi 24

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading