দীর্ঘ একযুগ পরে নির্বাচন হচ্ছে চর খিদিরপুরে। সর্বত্রই নির্বাচনের আমেজ বিরাজ করছে। রাজশাহী পবা উপজেলার আট নম্বর হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্গত এলাকা চরখিদিরপুর। বিভিন্ন সময় নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অনেকেই চর ছাড়লেও নাড়ির টানে রয়ে গেছেন অনেকেই। আগামি ১৭ জুলাই হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেবেন চরখিদিরপুরে ভোটাররা।
জানা গেছে, নদীর ভাঙনে সীমানা জটিলতা নিয়ে একযুগ নির্বাচন হয়নি এই আট নম্বর হরিয়ান ইউনিয়নে। সীমানা জটিলতা নিরসনের পরে একযুগ পরে হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ শেষে প্রার্থীরা ঘুরেছে ভোটারদের দ্বারে দ্বাওে, ভোট প্রার্থনা করছেন। দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি।
চর খিদিরপুরের বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, ‘নির্বাচনের পরে আর জনপ্রতিনিধিদের দেখতে পাওয়া যায় না। তারা তো রাজশাহীতে থাকে। কোনো আপদ–বিপদে তাদের পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়। নির্বাচনের পরে জনপ্রতিনিধিরা চরের ভোটারদের গুনে না। তারা চরের ভোটারদের মূল্যায়ন করেন না। আমাদের কথা চরে থাকে, চরের মানুষ হবে এমন মানুষকে আমরা জনপ্রতিনিধি করব।’
বিদ্যুৎহীন চরখিদিরপুর চলে সোলারের আলোয়। তবে নৌকাই একমাত্র যোগাযোগের মধ্যেম। যেটি নদী পারাপারে ব্যবহার হয়। তবে রাত–বিরাতে বিপদে–আপদে গর্ভবতি মায়েদের নদী পার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসতে পড়তে হয় নানান বিড়ম্বনায়। গভীর রাতে গর্ভবতি মাকে নিয়ে নদী পার হতে ঘাটে নৌকা পাওয়া গেলেও মাঝি পাওয়া কষ্টকর হয়। জরুরি প্রয়োজনে চরবাসীর জন্য সার্বক্ষণিক নৌকার ব্যবস্থা কোনো জনপ্রতিনিধিই করেননি। ভোটারদের অভিযোগ ভোটের পরে মেলে না জনপ্রতিনিদের দেখা।
তবে মোঃ সহিদুল ইসলাম নামের এক মেম্বর প্রার্থী খিদিরপুর চরবাসির জরুরি প্রয়োজনে নৌকা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালুর কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রথম নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। এই চরের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। চরবাসি আমার দিকে তাকালে আমি নৌকা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করবো। যাতে করে রাতবিরাতে অসুস্থ মানুষ দ্রুত নদী পার হয়ে রাজশাহী মেডিকেলে (রামেক) যেতে পারবে। সবেচেয়ে বেশি সমস্যা হয় গর্ভবতি মায়েদের। ঘাটে রোগি নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় নদী পার হওয়ার জন্য। আশা করছি এই সমস্যা আর থাকবে না চরবাসীর।’
চরবাসীর সাথে জনপ্রতিনিধিদের যোগাযোগের বিষয়ে খিদিরপুরের বাসিন্দা পান্না বেগম বলেন, এলাকার জনপ্রতিনিধি হলে আমাদের ভালো হবে। রাতবিরাতে আপদ–বিপদে আমরা পাশে পাব। তারা আমাদের সহযোগিতা করেন, আমরাও তাদের সহযোগিতা করি। আর নদীর ওইপারে জনপ্রনিধি হলে আমাদের যোগাযোগের সমস্যা হয়। বিভিন্ন সময় আমরা সমস্যায় পড়ি গর্ভবতি মায়েদের রাত–বিরাতে হাসপাতালে নিতে আমাদের সমস্যা হয়। ঘাটে নৌকা পাওয়া গেলেও মাঝি পাওয়া যায় না। ভোটে দাঁড়িয়েছে সহিদুল সে এই চরবাসীর জন্য নৌকা অ্যাম্বুলেন্স রাখার কথা বলেছেন। এতে করে রাত–বিরাতে জরুরি প্রয়োজনে মানুষ রাজশাহী শহরে যেতে পারবে।
পবা উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার শহিদুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, আগামী ১৭ জুলাই ৯ ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে ১০ জন ও সংরক্ষিত আসনে সদস্য পদে ১৯ জন এবং সাধারণ আসনে সদস্যপদে ৫৫ জন। মোট ৮৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ হাজার ৫২৮জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ৮৫০ জন ও নারী ভোটার ৯ হাজার ৬৭৮ জন।