18.7 C
New York
বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে গ্রিন টি এর উপকারিতা জানেন কি?

কাউকে চা অফার করলে না করবে, এমন মানুষ কিন্তু খুবই কম। বিশ্ব জুড়ে চা শুধু একটি জনপ্রিয় পানীয়ই নয়, পাশাপাশি চা নিয়ে সবার একটি আলাদা ইমোশনও কাজ করে। কিন্তু সেই চা শব্দটির পেছনে যখন গ্রিন শব্দটি জুড়ে “গ্রিন টি” হয়ে যায়, তখন অধিকাংশ মানুষের মুখই বাংলা পাঁচের মত হয়ে যায়। কিন্তু মজার বিষয় নাকি জানেন? যদি হেলথ বেনিফিটের কথা আসে, তাহলে এটি বিশ্বের যতগুলো পানীয় আছে তার মধ্যে অন্যতম কার্যকরী পানীয় এবং এটিকে সুপার ফুড হিসাবেও কনসিডার করা হয়। এতে আছে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্লোরোফিল ও পলিফেনল। আজকের ফিচারে থাকছে গ্রিন টির উপকারী দিক সম্পর্কে বিস্তারিত।

গ্রিন টি এর ইতিহাস

খানিকটা তেতো স্বাদের এই পানীয় পান করা শুরু হয়েছিলো ছোট্ট একটি ভুল থেকে। ২৭৩৭ খ্রীস্টপূর্বে চাইনিজ এমপেরোর শিনং ভুলবশত শুকনো চা পাতা সহ গরম পানি পান করে ফেলেন। তারপর তার কাছে ওই চায়ের ফ্লেভারটি বেশ রিফ্রেশিং মনে হয়। তখন থেকেই মূলত গ্রিন টি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। এখনকার সময়ে গ্রিন টি খুব সহজলভ্য হলেও তখনকার সময়ের সবচেয়ে দামী পানীয় ছিল এটি। তারপর ১৪শ শতাব্দীর দিকে যখন এটি সহজলভ্য হয়, তখন মানুষ ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করে, গ্রিন টি যে শুধু রিফ্রেশিং তা নয়, বরং এর হেলথ বেনিফিটসও অনেক বেশি।

গ্রিন টির উপকারী দিক

বর্তমানে যারা স্বাস্থ্য সচেতন , তাদের কাছে গ্রিন টি এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। খুবই কম ক্যালরি সম্পন্ন এবং বিভিন্ন বেনিফিটসে ভরপুর এই একটি মাত্র পানীয় শরীরে ম্যাজিকের মত কাজ করে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গ্রিন টির উপকারিতা সম্পর্কে।

  • দুশ্চিন্তা ও স্ট্রেস কমায়

বর্তমানে মানুষ যে সমস্যাটিতে অনেক বেশি ভুগছেন তা হলো দুশ্চিন্তা ও স্ট্রেস। এক্ষেত্রে গ্রিন টি কিন্তু বেশ উপকারী। কারণ এতে থাকা অ্যামিনো এসিড L-theanine স্ট্রেস কমায় এবং আমাদের রিল্যাক্সড ফিল করতে সাহায্য করে। এতে করে রাতের ঘুমও বেশ ভালো হয়।

  • ওয়েট লসে সাহায্য করে

বর্তমানে গ্রিন টি যে এতো জনপ্রিয় তার একটি বড় কারণ হলো ওয়েট লস করতে এটি বেশ হেল্প করে। কারণ গ্রিন টিতে ক্যাটেচিন (catechin) নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে, যেটি আমাদের বডি ফ্যাট ব্রেক ডাউনে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে যদি প্রোপার ডায়েট ও এক্সারসাইজ করার পাশাপাশি নিয়মিত গ্রিন টি পান করা হয়, তাহলে দ্রুত ওজন কমে।

  • কোলেস্টেরল কমায়

গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি লো ডেনসিটি কোলেস্টোরেল (LDL) বা ব্যাড কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এছাড়া হৃদরোগ জনিত বিভিন্ন সমস্যা উপশম করতেও গ্রিন টি এর ভূমিকা রয়েছে।

  • হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে

গ্রিন টি গ্যাসট্রোইনটেস্টিন্যাল বা ডাইজেশনজনিত যেকোনো সমস্যা যেমন, গ্যাস, ব্লোটিং, আইবিএস ইত্যাদিতে বেশ ভালো কাজ করে। পাশাপাশি এটি গাটে ভালো ব্যাকটেরিয়া বিফিডোব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়ায়।

  • ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে

টাইপ ২ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে দারুণ কাজ করে গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। রিসার্চে দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন গ্রিন টি পান করেন, তাদের টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা কম থাকে। তাছাড়া অতিরিক্ত ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণেও গ্রিন টির উপকারিতা রয়েছে।

  • ব্রেইনের স্লো এইজিং কমায়

২০২২ সালের স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিত গ্রিন টি পান করার ফলে ব্রেইন খুব ভালোভাবে ফাংশন করতে পারে। অন্য আরেকটি স্টাডিতে দেখা গেছে দেখা গেছে, এটি পান করার ফলে ৫০-৬৩ বছর বয়সী মহিলাদের ওয়ার্কিং মেমোরি ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি পায়। এটিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এল থিয়ানাইন মেমোরি ইমপ্রুভ করতে সাহায্য করে।

  • ইনফ্ল্যামেশন রেট কমায় এবং বোন হেলথ ইমপ্রুভ করে

গ্রিন টির অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরী প্রোপার্টিজ আমাদের শরীরের ইনফ্ল্যামেশন রেট কমিয়ে আনে৷ এই চায়ের আরেকটি কার্যকরী দিক হলো এটিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের বোন ফরমেশন ও বোন ম্যাস লস প্রতিরোধ করে।

  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

গবেষণায় এসেছে, যারা প্রতিদিন এক কাপ গ্রিন টি পান করেন, তাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। গ্রিন টিতে থাকা পলিফেনল স্কিনকে ইউভি রেডিয়েশন থেকে রক্ষা করে, যা ইউভি ইনডিউসড স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। ২০২০ সালের স্টাডি রিভিউ অনুযায়ী, গ্রিন টির ক্যাটেচিন উপাদান ব্রেস্ট, কোলেরেক্টাল, ইসোফেগাল, লাংস, প্রোস্টেড এবং লিভার ক্যানসারের রেট কমাতে সাহায্য করে।

  • গ্রিন টির কোনো সাইড ইফেক্টস আছে কি?

না, সেভাবে কোনো সাইড ইফেক্ট নেই, তবে যাদের আয়রন ডেফিশিয়েন্সি আছে, তাদের উচিত গ্রিন টি কম পান করা। কেননা চা পাতা হওয়াতে এটি ট্যানিন সমৃদ্ধ, তাই বেশি ট্যানিনের পরিমাণ শরীরে আয়রনের ঘাটতি বাড়ায়।

একদিনে সর্বোচ্চ কত কাপ গ্রিন টি পান করা যেতে পারে?

ফুড এবং ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুযায়ী, একজন মানুষ প্রতিদিন ৪০০ মি.গ্রা. বা প্রায় ১০ কাপ গ্রিন টি পান করতে পারেন। তবে সবার জন্য সেইফ জোন হিসাবে ৩-৫ কাপ ই পান করা ভালো। তবে এটি পান করার সময় কোনোরকম চিনি বা সুইটনার দেওয়া উচিত না, এতে করে এর কার্যকরিতা হ্রাস পায়। আপনারা চাইলে টেস্ট একটু বাড়াতে সাথে লেবু, আদা ইত্যাদি যোগ করতে পারেন।

এটুকুই ছিলো গ্রিন টির উপকারী দিক নিয়ে আজকের আলোচনা। পরিশেষে বলতে চাই, গ্রিন টি এর উপকারিতা অনেক বেশি হলেও এটি ডায়েটে ইনক্লুড করতে অনেকেই নারাজ। তবে একবার যদি করা যায়, তবে হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করা অনেক সহজ হয়ে যায়৷ আপনারা ভাবছেন, এতো কিছু যে লিখলাম আমি নিজে গ্রিন টি পান করি কিনা! মজার ব্যাপার হলো এই ব্লগ যখন লিখি, তখন কিন্তু এক কাপ গ্রিন টি সাথে নিয়েই লিখেছি। আপনারাও চাইলে নিয়মিত এটি পান করে দেখতে পারেন। আশা করি নিরাশ হবেন না।

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
আজকের রাজশাহী
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

বিনোদন

- Advertisment -spot_img

বিশেষ প্রতিবেদন

error: Content is protected !!

Discover more from News Rajshahi 24

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading