24 C
New York
বুধবার, মে ৮, ২০২৪
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

টিকটক ভিডিওর মাধ্যমে মিলিত হলো জন্মের সময় বিক্রি হওয়া যমজ বোন

জন্মের ঠিক পরেই মায়ের কাছ থেকে চুরির পর পৃথক পরিবারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল যমজ বোন অ্যামি এবং অ্যানোকে।

কয়েক বছর পরে তারা একটি টিভি প্রতিভা শো এবং একটি টিকটক ভিডিওর জন্য ঘটনাক্রমে একে অপরকে আবিষ্কার করেন। এছাড়া খুঁজে পান নিজেদের মাকেও। তারা জানতে পেরেছেন বহু বছর আগে তাদের হাসপাতাল থেকে চুরি করে বিক্রি করা হয়েছিল।

জার্মানির লিপজিগ শহরে একটি হোটেলে মা আজার সাথে দেখা করার অপেক্ষায় ছিলেন অ্যামি ও অ্যানো। অ্যামি হোটেলের একটি কক্ষে পায়চারি করতে করতে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলেন, ‘আমার সত্যিই ভয় হচ্ছে। আমি পুরো সপ্তাহ ঘুমাইনি। আমাদের সাথে কী ঘটেছিল সে বিষয়ে জানার এটাই সুযোগ।’

তার যমজ বোন অ্যানো একটি চেয়ারে বসে নিজের মোবাইল ফোনে টিকটক ভিডিও দেখছিলেন। তিনিও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা নিজেদের আসল পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য জর্জিয়া থেকে জার্মানিতে এসেছেন।

নিজেদের সম্পর্ক নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে তারা দুই বোন তাদের সাথে কী হয়েছিল তা নিয়ে দুই বছর ধরে খোঁজ-খবর করে চলেছেন। তারা জানতে পারেন, জর্জিয়ায় এমন আরও কয়েক হাজার মানুষ রয়েছে যাদের জন্মের পর হাসপাতাল থেকে চুরি করে বিক্রি করা হয়েছিল। সরকারিভাবে তদন্তের পরও এ ঘটনায় জড়িত কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি।

অ্যামি এবং অ্যানো একে অপরকে খুঁজে পাওয়ার গল্পটি শুরু হয় যখন তাদের দুজনের বয়স ছিল ১২ বছর।

অ্যামি কৃষ্ণ সাগরের কাছে তাকে দত্তক নেয়া মায়ের সাথে থাকতেন। একদিন তার প্রিয় টিভি প্রোগ্রাম জর্জিয়া’স গট ট্যালেন্ট দেখছিলেন তিনি। সেখানে তিনি অ্যানোকে দেখতে পান, যে দেখতে হুবহু তার মতো।

অ্যামি জানায়, প্রতিবেশিরা তখন তার সেই মাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে অ্যামি কেন অন্যজনের নামে প্রতিযোগিতায় নাচছে?’

অ্যামি তার পরিবারকে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে তার পরিবার এটি এড়িয়ে যায়। তার মা তাকে জানায় যে ‘প্রত্যেকেরই তার নিজের মতো দেখতে আরেকজন আছে।’

এর সাত বছর পরে ২০২১ সালের নভেম্বরে অ্যামি টিকটক-এ নিজের একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন।

সে সময় অ্যানির কাছ থেকে ২০০ মাইল (৩২০ কিলোমিটার) দূরে অবস্থিত তিবিলিসি শহরে থাকতেন অ্যানো। তার এক বন্ধু অ্যামির ভিডিওটি অ্যানোকে পাঠায়। অ্যানো লক্ষ্য করেন ভিডিওর মেয়েটি হুবহু তার মতোই দেখতে।

অ্যানো ভিডিওর মেয়েটিকে খুঁজে পেতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালাতে শুরু করেন। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ভিডিওটি শেয়ার করেন৷ অ্যামিকে চেনে এমন একজন ভিডিওটি দেখে সেটি তাদের ফেসবুকে পোস্ট করেন।

এই পোস্ট দেখে অ্যামি বুঝতে পারেন যে এটি সেই মেয়ে যাকে তিনি সাত বছর আগে ওই অনুষ্ঠানে দেখেছিলেন।

অ্যামি তখন অ্যানোকে মেসেজ দিয়ে জানায় যে সে তাকে অনেকদিন ধরে খুঁজছেন। জবাবে অ্যানোও জানায় যে তিনিও তাকে খুঁজছেন।

এরপর তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ চলতে থাকে। তারা নিজেদের মধ্যে অনেক বিষয়েই মিল খুঁজে পান।

তারা একই সঙ্গীত পছন্দ করতেন। তারা উভয়ই নাচ পছন্দ করতেন এবং এমনকি তাদের চুলের স্টাইলও একই ছিল। তাদের দুজনেরই ডিস্প্লাসিয়া নামক একটি জেনেটিক রোগও ছিল।

তারা দু’জনেই পশ্চিম জর্জিয়ায় কীর্তস্খি ম্যাটারনিটি হসপিটালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তাদের জন্ম নিবন্ধন অনুসারে, তাদের জন্ম তারিখে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধান ছিল।

অ্যামি বলেন, ‘যতবারই আমি অ্যানো সম্পর্কে নতুন কিছু জেনেছি, সেগুলো আমার কাছে আশ্চর্যের মনে হয়েছে।’

পরে তারা দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। তারা তিবিলিসি শহরে প্রথমবার সাক্ষাৎ করেন।

অ্যামি বলেন, ‘এটি একটি আয়নায় দেখার মতো ছিল। ঠিক একই মুখ, হুবহু একই কণ্ঠ। আমি সে আর সে আমি।’ পরে তিনি জানতে পারেন যে তারা যমজ।

অ্যানো বলেন, ‘আমি আলিঙ্গন অত পছন্দ করি না। কিন্তু আমি ওর সাথে আলিঙ্গন করেছিলাম।’

তারা দু’জনই যেই পরিবারে বেড়ে উঠেছেন সেই পরিবারের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তারা জানতে পারেন ২০০২ সালে তাদের দত্তক নেয়া হয়েছিল।

তারা দু’জনই আরো খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাদের জন্ম নিবন্ধনের অন্যান্য তথ্যও ভুলে ভরা।

অ্যামির পালিত মা জানান, তিনি সন্তান ধারণে অক্ষম ছিলেন। তাই তার এক বন্ধু জানায় যে হাসপাতালে একটি শিশু রয়েছে যাকে তার পরিবার চায় না। ডাক্তারকে টাকা দেওয়ার মাধ্যমে তিনি শিশুটি পেতে পারেন। অ্যানোর মাকেও একই কথা বলা হয়েছিল।

দত্তক নেয়া পরিবারগুলোর কেউই জানত না যে মেয়ে দুটি যমজ। আর এভাবে শিশু নেওয়াটা যে অবৈধ তা তারা বুঝতে পারেনি। হাসপাতালের কর্মীরা জড়িত থাকায় তারা টাকা দিয়ে শিশু কেনাকে বৈধ মনে করেছিলেন।

অ্যামি তাদের আসল মাকে খুঁজে বের করতে চায়। কিন্তু অ্যানো তার বোনকে প্রথমে এতে সায় দেননি। তিনি অ্যামিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘কেন তুমি তার সাথে দেখা করতে চাও যে আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’

জন্মের পর অবৈধভাবে দত্তক নেয়া হয়েছে বলে সন্দেহ করা শিশুদের সাথে জর্জিয়ান পরিবারগুলোকে পুনরায় মিলিয়ে দিতে কাজ করে এমন একটি ফেসবুক গ্রুপের সাথে কথা হয় অ্যামির।

জার্মানির একজন তরুণী অ্যামিকে জানায় যে, ২০০২ সালে কীর্তস্খি ম্যাটারনিটি হসপিটালে যমজ মেয়ের জন্ম দেওয়ার পর তাদের মা মারা যান। বিষয়টি শোনার পরও অ্যামির সন্দেহ কাটছিল না।

পরে ডিএনএ পরীক্ষায় জানা যায়, তার সাথে ফেসবুক গ্রুপে যেই মেয়েটির কথা হয়েছিল, সে আর কেউ নয়, তাদেরই বোন। আর তিনি জার্মানিতে তার জন্মদাত্রী মা আজার সাথেই থাকেন।

অ্যামি আজার সাথে দেখা করার জন্য মরিয়া ছিলেন। কিন্তু অ্যানোর সন্দেহ কাটছিলই ছিল। তিনি বার বার সতর্ক করে বলছিলেন, ‘এই সে ব্যক্তি যে তোমাকে বিক্রি করে দিয়েছিল। সে তোমাকে সত্য বলবে না।’

অ্যানোর সন্দেহ থাকার পরও তিনি অ্যামির সাথে জর্জিয়া থেকে জার্মানিতে যেতে রাজি হন।

লিপজিগের হোটেলে অ্যামি ও অ্যানো তাদের আসল মায়ের সাথে দেখা করার জন্য তৈরি ছিলেন। হোটেলেরই আরেকটি কক্ষে তাদের মা আজা অপেক্ষা করছিলেন।

একসময় তারা দু’জন সেই কক্ষে প্রবেশ করেন। মা আজা তাদের দেখে বুকে জড়িয়ে ধরেন। কয়েক মিনিট এভাবেই কেটে যায়। কেউই মুখ ফুটে কিছু বলছিলেন না।

অ্যামির চোখ থেকে তখন অশ্রু ঝরছিল, কিন্তু অ্যানো তখনও নীরব ছিলেন। তাকে কিছুটা বিরক্তও দেখাচ্ছিল। পরে তারা তিনজন বসে একান্তে গল্প করতে শুরু করেন।

তার মা আজা তাদের জানান যে তিনি অ্যামি ও অ্যানোকে জন্ম দেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে কিছুদিন কোমায় ছিলেন। জ্ঞান ফেরার পর তাকে জানানো হয় যে তার যমজ দুই সন্তান মারা গেছে।

আজা বলেন, হারানো সন্তানদের ফিরে পেয়ে তিনি জীবনের নতুন এক অর্থ খুঁজে পেয়েছেন।

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
আজকের রাজশাহী
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

বিনোদন

- Advertisment -spot_img

বিশেষ প্রতিবেদন

error: Content is protected !!

Discover more from News Rajshahi 24

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading