6.9 C
New York
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

না ফেরার দেশে পারি জমালেন, কবি জসীম উদ্দীনের প্রিয় মানুষ ধুনটের কবি ধুমকেতু

ধুনট, প্রতিনিধিঃ নাম কবি আমজাদ হোসেন তালুকদার হলেও কবি সাহিত্যের জগতে কবি ধুমকেতু নামেই বেশ পরিচিত। তার পিতার নাম মৃত মনির উদ্দিন তালুকদার, পেষায় কৃষি কাজ করতেন। মাতা মৃত মহিরুন বেগম গৃহিণী। তিনি ১৯৩৩ সালের ১৭ আগষ্ট বগুড়া ধুনট উপজেলার নিভৃত পল্লীর গোবিন্দপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার স্ত্রী মৃত সুরাইয়া পারভীন রীনা। তার ২ সন্তান ছেলে আলাউল ইসলাম সুমন ও মেয়ে সেনু খাতুন।

শিক্ষা জীবন: কবি ধুমকেতু নিজ উপজেলার বগা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। পরে স্থানীয় খাদুলী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়া বিএ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও বিএ পাস করেন।

রনাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধার কবি: ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করলেও সরকারী ভাবে গেজেট ভুক্ত হয়নি কবি ধুমকেতুর নাম। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে সাব:সেক্টর কমান্ডার আবদুল লতিফ মির্জা পরিচালিত পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবিরের অস্ত্র প্রশিক্ষণ শেষে স্বাধীনতা যুদ্ধের রনাঙ্গনে পাকাস্থানী বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালের ১২ই মার্চ মানকার চর নামক স্থানে তিনি পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। কবি ধুমকেতু সরকার অনুমোদিত আবদুল লতিফ মির্জা পরিচালিত পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবির হতে ৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ সালে তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এই মর্মে সনদ প্রাপ্ত হন। তিনি মুক্তিযোদ্ধার সকল সুযোগ সুবিধা পাবার যোগ্য উল্লেখ করিয়া গত ২৪ এপ্রিল ২০১৪ সালে সিরাজগঞ্জ পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবিরের অস্ত্র প্রশিক্ষক ও যুদ্ধকালিন সময়ের ব্যাটেলিয়ন কমান্ডার গাজী লুৎফর রহমান অরুন স্বাক্ষরিত আরো একটি প্রত্যায়ন প্রাপ্ত হন।

তার কবি ও সাহিত্য জগত: ছোট বেলা থেকেই তিনি লেখালেখি পছন্দ করতেন এবং ছড়া লিখতেন। তার প্রথম প্রকাশিত বই কয়লার আগুন এবং সর্ব শেষ প্রকাশিত বই কষ্টের দুঃখ। তার প্রস্তুতকৃত অপ্রকাশিত কবিতা ১৭ টি। অপ্রকাশিত অসংখ্য লেখা রয়েছে। তার লেখা ১৬টি পান্ডুলিপি ছাপানো অভাবে বস্তা ভর্তি পড়ে রয়েছে তালা ঝুলানো বক্সের মধ্যে। তার অন্যান্য প্রকাশিত বইয়ে মধ্যে কয়লার আগুন, অক্ষর বান্যাস, বর্ণছন্দ, বিবস্ত্র দুপুর, স্বাধীনতা সতীনের ঘরে, স্মৃতি অন্বেষা, সন্ত্রাস মাত্রিক দেশ, ছবির ঘ্রান, কাঁটাবন, ঘাসের মায়া, ঘাঁটা ঘাঁটা কাঁটা, আমার গাঁ, ভোরের তারা, ন মাসের একাত্তর, কালকেতু, বৃষ্টিতে আগুন। তিনি লেখা লেখির জগতেও পেয়েছেন নানা সম্মাননা। তিনি ২৫ আগষ্ট ২০১২ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর ক্যাপটেন মনসুর আলী সাহিত্য পরিষদ থেকে সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় কবি ধুমকেতু নামেই আজীবন সম্মাননা পান। পরিষদের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান মেজাম্মেল হক ও সাধারন সম্পাদক রাশেদ রেহমান এ সম্মাননা প্রদান করেন। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে বগুড়ার শেরপুর সাহিত্য ভাবনার ছোট কাগজ অপরাজিত আয়োজিত কবিতা উৎসব হতে ছড়া কবিতায় সম্মাননা পান কবি ধুমকেতু। কবিতা উৎসব কমিটির আহবায়ক নাহিদ হাসান রবিন, যুগ্ম আহবায়ক লতিফ আদনান ও আব্দুল মান্নান এ সম্মাননা পত্র প্রদান করে। ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০ সালে ধুনট উপজেলার কাশিয়াহাটা গ্রামের আমাদের প্রাণের লাইব্রেরি ও মেধা বিকাশ বৃত্তি ফাউন্ডেশন হতে সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখায় সম্মাননা স্বারক প্রাপ্ত হন। সম্মাননা স্বারকে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ইয়াছিন আরাফাত ও সাধারন সম্পাদক নাজমুল হাসান এ সম্মাননা স্বারক পত্র প্রদান করেন।

কবি জসীম উদ্দীন ও কবি ধুমকেতু: কবি ধুমকেতুর সাথে কবি জসীম উদ্দীনের সু সম্পর্ক ছিলো। পত্রের মাধ্যমে তারা কবিতার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। তারই জ্বলন্ত দিপ্তময় তথ্য হলো ৯ জুন ১৯৬৯ সালে পল্লী কবি জসীম উদ্দীন কবি ধুমকেতুর টিএম আমজাদ হোসেন নামের শেষ শব্দ সম্মোধন করে পত্র লিখেন-

প্রিয় হোসেন সাহেব,
আপনার কবিতা কিছুদিন আগে পেয়েছি। নানা কাজে উত্তর দিতে পারিনি। আমার প্রতি আপনি যে প্রশংসার পুষ্পবৃষ্টি করেছেন পড়েছেন, আশির্বাদ করবেন আমি যেন তার উপযুক্ত হতে পারি। আপনার কবিতায় বেশ ছন্দ ভুল আছে। আপনি অসংখ্য কবিতা পড়েন। যদি নিকটস্থ কোন ভালো কবি থাকে তাহার নিকট হইতে ছন্দ জ্ঞান লাভ করুন। তার কবিতা সামনে রেখে সে পথ অনুসারে কবিতা লিখুন। বর্তমান যুগে পত্রের ভিতরেও নানা ধ্বনী যুক্ত হয়েছে।

উল্লেখ্য স্থানীয় জিএমসি ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক লতিফ আদনান চিঠিটি সংরক্ষন করেছিলেন। এছাড়াও কবি ধুমকেতুর খুব কাছের বন্ধু সুলভ মানুষ তরুন কবি, সহিত্যিক ও সাংবাদিক সোহেল রানা সব সময় কবির খোজ খবর রাখতেন। পরন্ত বিকেলে তারা একে অপরের কাছে মনের ভাব প্রকাশ করতেন।

কবির শেষ জীবন: বুকে জমে থাকা অব্যাক্ত কথা আর নিজ হাতে লেখা অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি গুলো রেখেই ৮৯ বছর বয়োসে ১৩ই জানুয়ারী ২০২৩ সালে রাত ২টা ৩০ মিনিটে নিজ বাড়িতে শয্যাশায়ী হয়ে বার্ধক্য জনিত কারনে মৃত্যবরণ করেন। তিনি অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে পারি জমালেন না ফেরার দেশে।

তার প্রতি সমবেদনা: দেশের কবি সাহিত্য প্রেমীসহ ধুনট উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ তার রূহের মাগফিরাত কামনা করেন। ধুনট উপজেলা প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয় শোক বার্তা।

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
আজকের রাজশাহী
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

বিনোদন

- Advertisment -spot_img

বিশেষ প্রতিবেদন

error: Content is protected !!

Discover more from News Rajshahi 24

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading